নোবিপ্রবি প্রতিনিধি
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর ২০২৫) দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। এরপর প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বিজয় দিবসের বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এরপর নোবিপ্রবি শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সশস্ত্র সালাম প্রদানের মাধ্যমে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগের চেয়ারম্যান, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, বিভিন্ন অফিস, সাদা দলের শিক্ষক, কর্মকর্তা পেশাজীবী ফোরাম, কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন অডিটোরিয়ামে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, বিজয়ের ৫৫তম বর্ষে দাঁড়িয়ে মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল শহিদ এবং চব্বিশের বিপ্লবে যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। শরিফ ওসমান বিন হাদিসহ যারা গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছেন তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। একই সঙ্গে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতীক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
বিজয় দিবসে আমাদের প্রত্যয় হোক অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করা। আমরা যেন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারি, সত্যকে সত্য বলতে পারি এবং ন্যায়ের পক্ষে থাকতে পারি। যার যার দায়িত্ব রয়েছে সেই দায়িত্বটুকু আমরা যেন সঠিকভাবে পালন করি। এটাই হোক আজকের দিনের শপথ। শিক্ষার্থীরা আমাদের ভবিষ্যত। তারাই আগামীর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। সুশৃঙ্খল নাগরিক হিসেবে তারা যেন এ দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারে এবং প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে পারে।
উপাচার্য আরও বলেন, শিক্ষা ও গবেষণায় নোবিপ্রবিকে একটি অবস্থানে নিয়ে যেতে আমরা কাজ করছি। তারই ফল হিসেবে গ্লোবাল র্যাঙ্কিংয়ের ট্রেনে উঠতে পেরেছে নোবিপ্রবি। এ অবস্থান ধরে রেখে আমরা আরও সামনে এগিয়ে যেতে চাই। ইতিমধ্যে তৃতীয় একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। যার সুফল খুব দ্রুতই পাওয়া যাবে। শিক্ষা ও গবেষণায় নোবিপ্রবি এগিয়ে যাবে এবং বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচশ-এর মধ্যে অবস্থান করবে এ প্রত্যাশা করছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক বলেন মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সবার। কিন্তু একটি গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধকে তাদের ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করেছিল। আমরা এ সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। বিপ্লব পরবর্তী এ সময়টাতে আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্তর থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আত্মনির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে হলে শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বারোপ করতে হবে।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ তার বক্তব্যে স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল শহিদ ও চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, মেধাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার হয়েছেন তাদের একটি স্বপ্ন ছিল। আমরা সেই স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমাদের পক্ষে পুরো দেশ পরিবর্তন সম্ভব নয়, কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা মৌলিক পরিবর্তন আনতে চাই। যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না এবং শিক্ষা ও গবেষণার একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে।
ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. এস এম সোহেল রানার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর সরকার, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন সায়েন্সেস (আইআইএস) এর পরিচালক ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তামজিদ হোছাইন চৌধুরী, প্রক্টর এ এফ এম আরিফুর রহমান, ফলিত গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল করিম, শিক্ষা শাখার উপ-রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, প্রধান সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটর শেখ আব্দুল্লাহ ও শিক্ষার্থী তানজিলুর রহমান মুয়াজ। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী মুস্তাফা ফয়সাল নাঈম, অর্পিতা পোদ্দার অর্পণ এবং আফিয়া এশা। সভায় বিভিন্ন অনুষদসমূহের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, হল প্রভোস্ট, ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নোবিপ্রবিতে বিজয় দিবসে অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ভলিবল ম্যাচ ও আবাসিক হলসমূহের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নৈশভোজের আয়োজন। এছাড়াও বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।


