নিজস্ব প্রতিনিধি :
ঝড়, বন্যা ও নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন বাড়লেও অর্থায়ন কমে যাওয়ায় বাংলাদেশে মানবিক সেবা সংকট আরও জটিল হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাকশন ইন বাংলাদেশ (NAHAB)-এর চেয়ারপারসন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিকুল আলম।
তিনি ব্যাংককে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী রিজিওনাল হিউম্যানিটারিয়ান পার্টনারশিপ উইক (RHPW) ২০২৫-এ অংশগ্রহণকালে এসব কথা বলেন।
গত ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ”স্থানীয় নেতৃত্বকে শক্তিশালী করতে নেটওয়ার্কিং ও সমন্বিত মানবিক প্রচেষ্টা জোরদার করা।”- এই সেশনে বাংলাদেশের মানবিক কাজে নেটওয়ার্কগুলোর ভূমিকা, স্থানীয় সংগঠনের সক্ষমতা এবং নেক্সাসভিত্তিক (মানবিক- উন্নয়ন- শান্তি) উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন। আলোচনায় উঠে আসে গত কয়েক বছরে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও নদীভাঙনের মতো একাধিক বড় দুর্যোগে স্বল্প অর্থের কার্যকরী ব্যবহারে নেটওয়ার্কগুলোর সফলতা। এ পরিস্থিতিতে NAHAB, NIRAPAD, LTWG, Start Fund BD-এর মতো নেটওয়ার্কগুলো স্থানীয় সংগঠনগুলোকে একত্র করে অভিজ্ঞতা, তথ্য এবং অর্থের কার্যকরী ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। RHPW ২০২৫-এর প্রেজেন্টেশন পরবর্তী আলোচনায় উঠে আসে, নেটওয়ার্কিং ও অংশীদারিত্ব মানবিক কাজকে দ্রুত, আরও কার্যকর এবং কমিউনিটির কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলা।
মূল বক্তব্যে মো: রফিকুল আলম বলেন, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা ১৯৭১ এ যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে তৎকালীন সরকারে সহযোগী হয়ে ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ করে। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থাসমূহের সাথে একযোগে উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনে কাজ করে। এ দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, স্থানীয় সংগঠনের উপস্থিতি, অভিজ্ঞতা ও স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ দুর্যোগ মোকাবিলাকে সহজ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি-Together, we achieve more।
১০ ডিসেম্বর ২০২৫:
স্থানীয়ভাবে গৃহীত উদ্যোগ কীভাবে মানবিক কাজের ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে (“Locally-Led Solutions Contribute to Systemic Transformation”)- বাংলাদেশ থেকে NAHAB এর হয়ে এই বিষয়ে উপস্থাপন করেন ড. এহসানুর রহমান, উপদেষ্টা, নাহাব এবং সহ উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন মো: রফিকুল আলম। স্থানীয় সংগঠন ও কমিউনিটি নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিকল্পনা এবং পন্থা সৃষ্টি করলে তা বেশি কার্যকর হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই পরিবর্তন আনে। NAHAB-এর বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল তুলে ধরেন- যেমন কমিউনিটির নিজস্ব তহবিল গঠন, স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন (Volunteer Pools), স্থানীয় সংগঠনগুলোর যৌথ অংশগ্রহণ (Consortium-based Teaming), মানবিক–উন্নয়ন–শান্তি সমন্বিত পদ্ধতি (Nexus Approach), দক্ষতা বিনিময় (Capacity Exchange), পুল ফান্ড ব্যবস্থাপনা (Local & Network-based Pool Fund)।
উপস্থাপকরা বলেন- স্থানীয় নেতৃত্বে পরিচালিত এসব উদ্যোগ মানবিক সেবাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, কার্যকর ও স্থিতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় উদ্ভাবনই ভবিষ্যতের মানবিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী, সহনশীল এবং কমিউনিটি-কেন্দ্রিক করে তুলতে পারে।
উল্লেখ্য, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা ২০২৩ সাল থেকে NAHAB সেক্রেটারিয়েট হোস্ট করছে।
ব্যাংককে তিনদিনব্যাপাী (০৮-১০ ডিসেম্বর ২০২৫) আয়োজিত এ কনফারেন্সে এডিআরআরএন (ADRRN), সিডব্লিউএসএ (CWSA), ইকভা (ICVA) এবং ওচা OCHA) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শতাধিক প্রতিনিধি এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।


