নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের একান্ত সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আশিকুর রহমান সমির বিরুদ্ধে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) নোবিপ্রবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লেকচারার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসে আসেন আশিকুর রহমান সমি। তিনি যে গাড়িটি ব্যবহার করেন, সেটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঠ ১৩-১৭৭৫।
যা নোয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের সরকারি গাড়ি বলে জানা গেছে। সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
নোবিপ্রবির সংস্থাপন শাখা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। ওই বিজ্ঞপ্তির আলোকে পরীক্ষায় অংশ নিতে শনিবার নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে আসেন আশিকুর রহমান।
দুটি প্রভাষক পদের বিপরীতে আশিকুরসহ ২৭ জন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষা শেষে একই দিন ১৪ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়।এদিন আশিকুর রহমান সরকারি লোগো ও ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডযুক্ত গাড়িতে করে ক্যাম্পাসে আসেন। পরীক্ষা শেষে একই গাড়িতে ঢাকায় ফিরে যান। ওই গাড়ির ছবি তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।
গাড়িটি বন অধিদফতরের সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক, আগারগাঁও, ঢাকার ঠিকানায় নিবন্ধিত বলে জানা গেছে। তবে গাড়িটি উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা মোল্লা মিজানুর রহমান ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে দেখি সরকারি স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি প্রশাসনিক ভবনের সামনে থামলো। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো সরকারি কর্মকর্তা অফিসিয়াল কাজে এসেছেন।
পরে জানতে পারলাম একজন পরীক্ষার্থী উপদেষ্টার এপিএস। ব্যক্তিগত কাজে এ গাড়ি ব্যবহার করে এসেছেন। পরবর্তীতে জেনেছি তিনি আবেদন জমা দিতে একই গাড়ি ব্যবহার করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশিকুর রহমান সমি গাড়িটি সরকারি বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ ছিলাম। আগের দিন রাত ২টার সময় জানতে পেরেছি যে পরদিন পরীক্ষা। আমি নোয়াখালীতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল ১০টা বেজে যায়।
আমাকে কেউ যদি সাহায্য করে, আপনি কীভাবে দেখবেন? আমি পদে এসে কোনো ধরনের নিয়োগ-বাণিজ্য, বদলির তদবির করিনি। আমি যতটুকু জানি, ওখানে একজন শিক্ষকের একজন চাকরিপ্রার্থী ছিলেন। তিনি আমার প্রোফাইল দেখে ভয় পেয়েছেন। তাই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। আমি দেশ-বিদেশে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ তামজিদ হোছাইন বলেন, উপদেষ্টার এপিএসের সরকারি গাড়ি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে আসার বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের জানা নাই।
এছাড়া আমি শনিবার ছুটিতে ছিলাম। শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বোর্ডে উপাচার্য, বিভাগের চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরা থাকেন। নিয়োগ পরীক্ষায় কে কীভাবে এলেন, সেটি দেখা নিয়োগ বোর্ডের কাজ নয়। বোর্ডের সামনে একজন করে প্রার্থী উপস্থিত হন।
অন্যদিকে উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা মোল্লা মিজানুর রহমান অভিযোগটি তুচ্ছ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তিনি আমাদের অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। আমরা কেবল তাকে লিফট দিয়েছি। আমি নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় কর্মরত থাকায় গাড়িটি কিছুটা বেশি সময় ব্যবহার করা হয়েছে। এটা খুবই সামান্য বিষয়।